রাজ পরিবারের রীতি মেনেই শুরু হয় পুজো সাথে তোপধ্বনি ও ঢোল, কাসর,সানাই দেবী মৃন্ময়ীর আরাধনায় বাঁকুড়ার মল্লগড় বিষ্ণুপুর। রাজ্যের প্রাচীন পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারের পুজো। এখানে পূজিতো হন মা মৃন্ময়ী। মল্লরাজ পরিবারের এই পুজো প্রায় ১০২৮ বছরের। যার সূচনা করেছিলেন রাজা জগৎমল্ল আনুমানিক ৯৯৭ সালে। কথিত আছে রাজা জগৎমল্ল একবার জঙ্গলের শিকার করতে গিয়ে পথভ্রষ্ট হন। এর পরে জঙ্গলে এক বট গাছের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় মা মৃন্ময়ীর অলৌকিক শক্তির সম্মুখীন হন এবং সেখানে মন্দির স্থাপনের আদেশ পান। এর পরে সেখানেই স্থাপিত হয় মা মৃন্ময়ীর মন্দির। সেই থেকে প্রাচীন রীতি মেনে আজও সমান তালে হয়ে আসছে দেবীর আরাধনা।
প্রতিবছর প্রথামেনে জীতাষষ্ঠীর পরেই কৃষ্ণ নবমী তিথি ধরে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। এই দিন তপোধ্বনি দিয়ে আনাহয় বড় ঠাকুরানিকে। পুরান অনুযায়ী বড়ঠাকুরানি অর্থাৎ মা মহাকালী এর পর চতুর্থীর দিন আসেন মেজো ঠাকুরানি অর্থাৎ মা মহালক্ষী এর পর সপ্তমীর দিন আসেন ছোট ঠাকুরানী অর্থাৎ মা মহাসরস্বতী। রাজপরিবারের প্রাচীন পুঁথি "বলিনারায়নি" নিয়ম মেনেই হয় পূজা অর্চনা। পাশাপাশি বংশ পরম্পরায় ফৌজদার পরিবারের তিনটি পৃথক পৃথক ফটো চিত্রকে দেবী হিসেবে পূজিত করা হয়। এই ফটো চিত্র আঁকতে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক রঙকেই ব্যবহার করা হয়।
আজও
প্রাচীন প্রথা মেনে সন্ধিক্ষনের মুহূর্তে রাজ পরিবারের বড় কামান থেকে তোপধ্বনি দিয়েই সন্ধিক্ষণ কে সূচিত করা হয়। রাজপরিবারের সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ ঠাকুর এর কথায় এর আগে মল্লার রাজ বাড়ির বড় কামানের তোপধ্বনির পরেই মল্লগড়ের বিভিন্ন মণ্ডপ ও বোনেদিবাড়ির পুজো শুরু হতো। এছাড়াও অষ্টমী ও নবমীর মধ্যরাতে মহামারী দেবীর পূজা হয়। উনি মল্লগড়কে মহামারীর কবল থেকে রক্ষা করেন। মহারাজ বীরহাম্বির এই পূজোর সূচনা করেন। এর পর বিজয়া দশমীর দিন সকালে মায়ের ঘট বিসর্জন এবং সন্ধ্যেবেলায় শ্রী রামচন্দ্রের পুজো এবং দইয়ের মধ্যে চ্যাং মাছ ছাড়া ও নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে পূজো সমাপ্ত করা হয়।
কালের চক্রে সময়ের সাথে আজ মল্লগড়ের চেহারা অনেকটাই পাল্টেছে। পরিবর্তন হয়েছে অনেক নিয়ম। তবু আজও পরিবর্তন হয়নি মা মৃন্ময়ীর পুজোর রীতিতে। তাই আধুনিক যুগেও পুজোর এই প্রাচীন ঐতিহ্য ও রীতিনীতির সাক্ষী থাকতে থাকতে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা হাজির হন এই মল্লগড়ে ।
0 মন্তব্যসমূহ